খোলসে বা খলিশা ফুলকে সুন্দরবনের ‘হানি প্লান্ট’ বলা হয়। পুরো দেশের মধ্যে শুধুমাত্র সুন্দরবনের বনেই খলিশা গাছের মধু পাওয়া যায়। হয়তো সেই কারণেই বিশেষজ্ঞদের কথায়, খলিশা সুন্দরবনের আশীর্বাদ!

ফাল্গুন মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে সুন্দরবনে সবথেকে বেশি, বলতে গেলে শুধুমাত্র খোলসে ফুল’ই ফোটে। এইসময় জঙ্গলে অন্য তেমন কোনো ফুলের দেখা পাওয়া যায় না। ছোটো-ছোটো গোল আকৃতির সাদা রঙের এই ফুল তার সুগন্ধ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বন-জুড়ে। 

মৌমাছি খোলসের মধু সংগ্রহ করে জঙ্গল গভীরে গাছে বাঁধা চাকে ভরতে শুরু করে দেয়। আমাদের মৌলেরা সরকারি পাস নিয়ে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করে, জীবনের চরমতম ঝুঁকি নিয়ে সেই চাক কেটে মধু সংগ্রহ করে মার্চ-এপ্রিল নাগাদ। 

সিজনের এই প্রথম চাক কাটা/ভাঙাকে ‘প্রথম কাট’ বা বুড়ি পট্টি বলা হয়। 

এরপর যথাক্রমে (অল্প)খোলসে, গরান, গেওয়া, হরগোজা, কিরপি, সুন্দরী, গোল, তরা ইত্যাদি ফুলের মধুর চাক ‘দ্বিতীয় কাট’ (মিশ্র ফুলের মধু) এবং পরবর্তী সময়ে বাইনের মধুতে ‘তৃতীয় কাট’ পড়ে।

তবে প্রথম কাটের খোলসের মধু অন্যতম সম্পদ সুন্দরবনের। স্বাদ-গুণমান-গন্ধ এবং রঙে একে মাত দেওয়ার সাধ্যি অন্যদের নেই।

জলীয় বাষ্প থাকার কারণে এবং অতিরিক্ত টাটকা হওয়ার কারণে, গড়নে পাতলা হওয়ার কারণে প্রথম দিকে এই মধুতে বেশ ফেনা ওঠে। নড়াচড়া খেলে মধুতে ফেনা বাড়ে। আবার কিছু পরে আপনা থেকে স্থির হয়ে মধুর রূপে ফিরে আসে।

আমাদের মধু সম্পূর্ণভাবে Raw (কাঁচা) এবং কোনোরকমে প্রসেসিং- এ না থাকায় মধুতে ঝাঁজ থাকে। হালকা অ্যালকোহলিক গন্ধ থাকে সুন্দরবনের মধুতে(সেই গন্ধ বোঝা কঠিন)… সুন্দরবনের আবহাওয়ায় আদ্রতা অনেক বেশি থাকায় পাতলা গড়ন হয় মধুর। মিষ্টতা তীব্র নয়, হালকা মিষ্টির হয় এই মধু। রং গাঢ় নয়। 

কোনো কাটে কেওড়া ফুলের মধু মিশে গেলে সেই মধুতে হালকা টকশি ভাব আসতে পারে। মিশ্র ফুলের মধু তুলনামূলকভাবে খোলসের মধুর থেকে গড়নে ঘন এবং রঙে গাঢ় হয়।

®©রুবি শেখ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *